যোগব্যায়াম পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ একটি অনুশীলন প্রক্রিয়া | যে মানুষ রোজ যোগব্যায়াম করে, তার শরীর ও মন হয়ে ওঠে সতেজ এবং সুস্থ | কিন্তু এই যোগ ব্যায়াম করার আগে যোগ ব্যায়ামকারীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানার প্রয়োজন আছে |
সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি হলো:
১. যোগব্যায়াম করার নির্দিষ্ট একটি বয়স আছে | যেকোনো বয়স থেকেই যোগব্যায়াম শুরু করে দেওয়া যায় না | যোগব্যায়াম অভ্যাসকারীর কমপক্ষে ৫ বছরের উপরে বয়স হওয়া প্রয়োজন | যদি আপনার সন্তানের ৫ বছর উর্ধ্বে বয়স না হয়ে থাকে তাহলে তাকে কখনোই জোর করবেন না এটা করার জন্য |
2. যোগব্যায়াম কিন্তু নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আলাদা আলাদা হয়ে থাকে | যোগের অনেক ব্যায়াম কিন্তু একজন নারীর পক্ষে এবং একজন ৭০ বছর বয়সী কোনো ব্যক্তির পক্ষে করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা | তাই আপনি যদি এমন একটি যোগাসন কেন্দ্রে ভর্তি হয়ে থাকেন যেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে সব ধরনের ব্যায়াম করানো হয়, তাহলে সাবধান হয়ে যান এবং দ্রুত নিজের যোগাসন কেন্দ্রটিকে পরিবর্তন করুন |
৩. বছর ১০-১৫ বয়সই ছেলে-মেয়েরা, প্রত্যেকটি যোগাসন প্রথম প্রথম ৩০ সেকেন্ড করে 8 বার অভ্যাস করবে | তারপর ধীরে ধীরে যখন তুমি প্রত্যেক আসন ৩০ সেকেন্ড করতে সাবলীল হয়ে যাবে তখন সেটা করার সময় সীমাকে আসতে আসতে ১৫ সেকেন্ড করে বাড়াও |
8. অনেকদিন অভ্যাসের ফলে একআসনে বসে থাকার ক্ষমতা আমাদের বৃদ্ধি পায় | তখন সমস্ত যোগাসন অভ্যাসকারীরা একের পর এক আসন ৪বার করে অভ্যাস না করে বরং সেই প্রত্যেকটিকে অন্তত 8 থেকে ৫ মিনিট ধরে অভ্যাস করলে ভালো হয় | তারপর প্রত্যেকটি আসন এইভাবে 8-৫ মিনিট ধরে করার পর ১ মিনিটের শবাসনের মাধ্যমে বিরতি নেওয়া যেতে পারে |
৫. যোগাসন অভ্যাসকারীর প্রত্যেকটি আসন অভ্যাসকালে যেই আসনটি অভ্যাস করছে তার উপকারিতা সম্পর্কে নিজ মনে চিন্তা করা উচিত এবং নিজ শরীর ও মনের উপর সেটির প্রভাবকে উপলব্ধি করতে চেষ্টা করা উচিত |
৬. যোগব্যায়াম শেষে মিছরি, আখের রস কিংবা আখের গুড়ের সরবৎ একটু লবন মিশিয়ে পান করা স্বাস্থের পক্ষে ভালো |
৭. মেয়েদের পিরিয়ডসের সময় কখনোই যোগাসন করা উচিত নয়, অন্তত এক সপ্তাহের জন্য এইসবের থেকে বিশ্রাম নেওয়া উচিত |
৮. আপনি যদি রোজ যোগাসন করেন তাহলে সপ্তাহে একদিন সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিন | প্রতিদিন জোর করে এবং শরীরকে বিশ্রাম না দিয়ে যেকোনো ধরনের শারীরিক চর্চা আপনার স্বাস্থ্য অবনতির মূল কারণ হয়ে উঠতে পারে | তাই নিজেকে সপ্তাহে একদিন করে বিশ্রাম দিন |
৯. যোগাসন করার সময় পায়ের নীচে পাতলা গদির মতো কোনো আসন রাখলে যোগাসন করার ক্ষেত্রে আপনার অনেক সুবিধা হতে পারে |
১০. অনেকেই মনে করেন যোগব্যায়াম করার নির্দিষ্ট কোনো সময় আছে | তা কিন্তু মোটেই নয় | অভ্যাসকারী নিজের সুবিধা মত ভোরবেলা কিংবা রাত্রে শোবার আগে এটি অভ্যাস করতে পারে | কিন্তু সকালে ছাড়া অন্য কোনো সময়, খালি পেটে যোগাসন করা একদমই উচিত নয়, এমনকি ভরা পেটেও যোগাসন করা উচিত নয় |
১১. যোগাসন শুরু করার আগে খালি হাতের ব্যায়াম করে নেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন | শরীরকে ওয়ার্ম আপ না করে ব্যায়াম করলে, আপনার ভয়াবহ চোট লাগতে পারে | তাই সাবধান |
১২. শীর্ষাসন করার পর কখনোই কিন্তু শবাসন করা উচিত নয় | যদি আপনি এটা করে থাকেন তাহলে আপনার মাথা যন্ত্রণা হবেই | কারণ আমরা যখন শীর্ষাসন করে থাকি তখন আমাদের শরীরের সমস্ত রক্ত মাথার দিকে যেতে শুরু করে, যদি তখনই আমরা আসনটি শেষ করার পর সাধারন আসনে না বসে থাকি এবং শবাসন করা শুরু করে দিই তাহলে মাথার রক্ত শরীরের সাথে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে পারেনা, যারফলে শুরু হয় মাথা ব্যথা |
১৩. আসন অভ্যাসকালে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকভাবে নিতে এবং ছাড়তে হয় | কোনো অবস্থাতেই দম বন্ধ করে যোগাসন করা উচিত নয় |
১৪. যোগমুদ্রা ছাড়া আর অন্য কোনো মুদ্রা ১০ থেকে ১২ বছরের কম বয়সই ছেলেমেয়েদের করা উচিত নয় এমনকি ঋতুচক্র তৈরী হয়নি এমন মেয়েদেরও এটি করা উচিত নয় |
১৫. শুধুমাত্র রোগীরা যারা কোনো বিশেষ রোগ নিরাময়ের জন্য যোগাসন করবে, তারা কোনো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতি আসনের শেষে প্রয়োজন মতো শবাসন অভ্যাস করবে |
১৬. রক্তচাপ অনেক বেশি হলে শবাসন ছাড়া আর কোনো আসন করা উচিত নয়, নাহলে আপনার জীবনহানি পর্যন্ত হতে পারে |
১৭. লিভার বড় হয়ে যাওয়ার সমস্যা থাকলে পশিমোত্তানাসন, শলভাষণ ও ভুজঙ্গাসন করা উচিত নয় |
১৮. হার্টের সমস্যা থাকলে শীর্ষাসন করা উচিত নয় |
১৯. প্রেগনেন্ট হওয়ার ৩ মাস পর্যন্ত যোগ ব্যায়াম করা যেতে পারে এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার ৩ মাস পর থেকে যোগ ব্যায়াম শুরু করা ভালো এতে প্রসবের পর থলথলে ঝোলা পেটের সমস্যা দূর হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি |
20. আপনার যদি অনিদ্রা কিংবা স্বপ্নদোষের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে গোমুখাসন করা শুরু করুন | আপনার এই সমস্যা অতি তাড়াতাড়ি দূর হয়ে যাবে |
২১. যোগব্যায়াম এক প্রকার হালকা ধরনের অনুশীলন প্রক্রিয়া | এই ব্যায়াম অভ্যাসে মানুষের শরীরে স্নায়ুর ক্ষমতাবৃদ্ধি পায় এবং বয়সকালে বিভিন্ন মাংশপেশীর স্বাভাবিক গঠন এবং শক্তিলাভ সম্ভব হয় |
২২. হার্নিয়া হলে কোনো প্রকারের পেটের ব্যায়াম করা উচিত নয় | আপনি যদি তা করেন তাহলে আপনার হার্নিয়া ফেটে যেতে পারে |
বি: দ্র: যোগাসন সম্পর্কে আরো বিস্তরভাবে জানতে চাইলে অবশ্যই আপনি নীলমনি দাসের যোগাসনের বই পড়ুন |
আশা করি মেডিটেশন নিয়ে আপনার সমস্ত doubt আমরা clear করতে পেরেছি | লেখাটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই এটিকে সবার সাথে শেয়ার করুন এবং অবশ্যই কমেন্টে লিখে জানান আপনার মতামত |
এছাড়া আপনি যদি সত্যিই মেডিটেশন অনলাইন কিংবা আমাদের সেন্টারে এসে অফলাইনে শিখতে চান তাহলে এখুনি কল করুন +91 9433-657-349 এই নাম্বারে |