ডিপ্রেশন ও দুশ্চিন্তা মুক্তির ৮টি কার্যকর উপায় | Depression & Anxiety Relief in Bengali

8-Natural-treatment-anxiety-&-depression

ডিপ্রেশন ও দুশ্চিন্তা :

বিগত কয়েক বছরের মধ্যে শোনা মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা গুলির মধ্যে একটি হল অবসাদ ও দুশ্চিন্তার। তবে দুশ্চিন্তার হল সম্পুর্ন মানুষের অনিয়ন্ত্রিত মানসিক স্থিতি যার প্রধান কারণ হল ভয়, যা কোন বয়সের মানুষের মধ্যে বিদ্যমান, তবে এই সমস্যার লক্ষণ এবং তার বহিপ্রকাশ প্রতিটি মানুষের মধ্যে বিভিন্ন।

ডিপ্রেশন বা দুশ্চিন্তা হল অধিক নেতিবাচক মানসিক চিন্তার প্রভাব যা সম্পূর্ণভাবে মানুষের নিজের তৈরি যা এমন কী জেনেটিক ভাবে প্রভাব বিস্তর করি কারণ এই সমস্যা বাবা কিংবা মা এর থাকলে তাদের সন্তানের মধ্যেও 30% – 40% চান্স বৃদ্ধি পায় অবসাদ গ্রস্থ হওয়ার।  

সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যপার দুশ্চিন্তা এবং অবসাদ একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত রোগ কারণ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখা গেছে যেসব মানুষ দুশ্চিন্তা শিকার তারা মধ্যে 50% – 60% ভাগ ক্ষেতে রোগীরা অবসাদের শিকার এবং একি রকম ভাবে দেখা গেছে যারা অবসাদের শিকার তাদের মধ্যে 50% – 55% মানুষ ভয়ানক দুশ্চিন্তার শিকার।

তবে খুব সহজ ৮টি কার্যকর উপায় বা ট্রিটমেন্ট দ্বারা ডিপ্রেশন ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব, তবে তার আগে জেনে নেওয়া যাক প্রকৃত রোগ সম্পর্কে কিছু জরুরী তথ্য –


দুশ্চিন্তা লক্ষণ ও অবসাদের লক্ষণ :

দুশ্চিন্তা লক্ষণ : অবসাদ এর লক্ষণ :
1. খাবারের ইচ্ছা কমে যাওয়া বেড়ে যাওয়া. হঠাৎ স্পন্দন বেড়ে যাওয়া যেকোনো কাজেই ভয় পাওয়া
2. বিনা কারণে খুবই চিন্তিত হয়ে থাকা
3. শরীরের প্রত্যেকটি পেশিতে অসম্ভব ব্যথা
4. বিশ্রামের অভাব এবং কাজে ফোকাস করতে অসুবিধা  
5. ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি হ্রাস হওয়ার সমস্যা সৃষ্টি
6. শারীরিক ক্লান্তি ঘুমের সমস্যা বা গভীর ঘুমের সমস্যা
 
1. যে কোনো কাজেই ইচ্ছা শক্তির অভাব
2. মাথা ব্যাথা ও শারীরিক ক্ষমতা কমে যাওয়া
3. অযথা দুঃখ প্রকাশ করা
4. নিজেকে দোষী মনে করা
5. নিজেকে একা মনে করা ও একা ভাবা
6. সুইসাইড সম্পর্কে চিন্তা করা
7. মদ বা অন্য কোন নেশার প্রতি অস্বাভাবিক আসক্তি
Free Anxiety Test LinkFree depression Test Link
 depression_suffers_women

দুশ্চিন্তা এবং ডিপ্রেশন ক্ষতিকারক প্রভাব বা কুফল কী কী:

অনিদ্রা : সঠিক পরিমাণ নিদ্রা সুস্থ থাকার জন্য অবশই প্রয়োজন, একটি সুস্থ মানুষের দিনে 7-8 ঘণ্টা গভীর ভাবে ঘুমের প্রয়োজন। কিন্তু দুশ্চিন্তা আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় ক্রিয়া কলাপে বাধা ও অনিয়ম সৃষ্ঠী করে যার ফলে শরীরের নানা রকমের ক্ষতি হয়।  

হরমোন ব্যালান্স :  দুশ্চিন্তার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে আমাদের হরমনের উত্পাদন ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার উপর কারণ এটি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত যে দুশ্চিন্তা আমাদের রক্তের মধ্যে রাসায়নিক বিষ বা টকসিন (Toxin) উত্পাদন মাত্রা বহু গুনে বাড়িয়ে তোলে।

রক্ত চাপ: সুস্থ শরীরের জন্য সঠিক রক্ত চাপ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু দুশ্চিন্তা আমাদের শরীরে cortisolও adrenaline হরমোন প্রভাব কে বৃদ্ধি করে, যার ফলে রক্ত চাপ অতি মাত্রায় বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের নানা ক্ষতি সাধন হয়।

অনিয়ন্ত্রিত সুগার বা Diabetes: দুশ্চিন্তা আমাদের শরীরের ইনসুলিন (insulin) হরমনের উত্পাদন ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার উপর প্রভাব বিস্তার করে, যার ফলে আমাদের রক্তে অতি মাত্রায় সুগার পরিমাণ বাড়তে থাকে যা শরীর কে ধীরে ধীরে নানা মারত্বক রোগের দিকে ঠেলে দেয়।

হৃদ রোগ: দুশ্চিন্তা ও হাই স্ট্রেস আমাদের সরাসরি হৃদ স্পন্দনের উপর প্রভাব বিস্তার করে, যাতে হৃদ স্পন্দন  অস্বাভাবিক রকম বৃদ্ধি পায় ও দীর্ঘ দিন এই সমস্যা মানুষর হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা 60% বাড়িয়ে তলে।   

অধৈর্য ও বদমেজাজ : নানা পরিক্ষার দ্বারা প্রমানিত দুশ্চিন্তা বা স্ট্রেস মানুষের স্মৃতি শক্তি থেকে শুরু করে ধৈর্য ক্ষমতার উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে, এছাড়াও এই রোগের সবচেয়ে বড় ক্ষতিকর দিক হল অবসাদ, যা মানুষ কে মানসিক ভাবে অতি দুর্বল করে তলে।


Depession treatment doctor
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ৮টি কার্যকর উপায় এবং সহজ ট্রিটমেন্ট

মানসিক দুশ্চিন্তার প্রধান কারণ হল মনের চিন্তা উপর অনিয়ন্ত্রনের বহিপ্রকাশের প্রভাব,  তাই এই ধরনের সমস্যা সম্পুর্ন সমাধানের পথ একমাত্র শরীর মন এবং বিচার ধরার উপর সঠিক নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করা যা প্রথমিক স্তরের ক্ষেত্রে খুব সহজে সম্ভব।   

healthy food for depression

1. সঠিক পুষ্টিকর অহার বা Diet :

ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার:

ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড আমাদের ব্রেনের সমস্ত ফাংশন কে সঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং ব্রেনের মধ্যে ডিপ্রেশন ডিপ্রেশন থেকে হওয়া ইনফ্লামেশন ও Cellular ডেমেজ কে কমায়।

এরকম কিছু খাবার হল আখরোট, আলমন্ড, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, ইত্যাদি।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার:

ডিপ্রেসন বা বিষন্নতার ফলে আমাদের শরীরের মধ্যে দিগুন ফ্রী রাদিক্যালস সৃষ্ঠী হয় যার ফলে ব্রেন ও শরীরের বিভিন্ন ভাগে সেলুলার ড্যামেজ হতে শুরু করে যা খুবই ক্ষতি কারক।

এই ফ্রী রাদিক্যালস এর অধিক উত্পাদন ও শারিরীক ক্ষতিকারক প্রভাব কম করতে সাহায্য করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার।

সহজে পাওয়া প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত রোজ কার খাবার হল কুমড়ো, গাজর, ব্রকলি, পালংশাক, টমেটো, ক্যাপসিকাম, লেবু এবং আঙ্গুর ইত্যাদি।

প্রোটিন যুক্ত খাবার

প্রোটিন মধ্যে থাকে এক প্রকার amino acid যার নাম  tryptophan, এটি সেরেটোনিন বৃদ্ধি করতে সাহায্য এবং আমাদের শরীরে এনার্জি বুস্ট করে। যা আমাদের শারিরীক ও মানসিক ভাবে বিকাশে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে।

এরকম প্রোটিন যুক্ত হল দুধ, মাছ, মাংস, ডিম, সমস্ত প্রকার ডাল, সোয়াবিন ইত্যাদি

ভিটামিন ও nutrient যুক্ত সবুজ শাকসবজি

সবুজ শাকসবজি মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফাইবার এবং বিভিন্ন ভিটামিনের সম্ভার। এছাড়া শাকসবজির মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে শক্তিশালী ইমিউনিটি বুস্টকারি উপাদান ও anti-cancer গুনাগুন, যা আমাদের সেলুলার ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে এবং শরীরকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। 


depression relief meditation

2. মেডিটেশন বা ধ্যান

বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার দ্বারা প্রমানিত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির পরম ঔষধ হল প্রতিদিন সঠিক নিয়মে মেডিটেশন অভ্যাস করা, কারণ মেডিটেশন আমাদের ভয় অস্থিরতা, উদ্বেগ, অস্বাভাবিক চিন্তা উপর মানসিক অস্থিরিতা উপর সহজে নিয়ন্ত্রণ আনতে সাহায্য করে।

এবং মস্তিষ্কের অতিরিক্ত চিন্তা প্রবাহ থেকে শুরু করে শরীরের রক্তচাপ এবং স্ট্রেস হরমোন গুলি সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রনে রাখে যার ফলে আমরা বিনা কোন ওষুধে কিছু সময়ের মধ্যে ভিতর সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে উঠতে পারি।

মেডিটেশন আমাদের নানান উপকারী গুণ আছে যা মুড কে ব্যালেন্স রাখতে এবং  দুশ্চিন্তা ও অবসাদ মত সমস্যা সহজে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুন: মেডিটেশন ও এর উপকারিতা


3. Yoga ও  প্রাণায়াম:

প্রতিটা মানুষের সুষ্ঠ থাকতে নির্দিষ্ট শারিরীক অ্যাক্টিভিটি অব্যসক কারণ এটি আমাদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশে অতি প্রয়োজনীয়।

তবে একটি পরীক্ষার মতো দেখা গেছে যে সব মানুষ বিষন্নতা বা দুশ্চিন্তা শিকার তাদের ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি অভাব বেশি, এবং শরীরের মধ্যে এনার্জীর অভাব দেখা যায়। একমাত্র ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি দাঁড়াই দাড়াই শরীরের সমস্ত পেশী ও মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং শরীর ও মনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে।

যোগব্যায়াম এই সমস্যাকে সম্পুর্ন কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে কারণ Yoga এক একটি আসন শরীরের বিভিন্ন পেশীকে স্ট্রে্‍চ করে এবং সম্পুর্ন বিকাশে সাহায্য করে।

এছাড়াও প্রাণায়াম ব্রেন ও শরীরের মধ্যে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে থেকে শুরু  করে মনের অসাভাবিক গতিবিধি স্থির করতে সাহায্য করে যা হতাশা বা দুশ্চিন্তার গ্রস্থ মানুষের ক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে।        

আরো পড়ুন : 7টি বিশেষ যোগ আসন যা আমাদের depression কমাতে সাহায্য করে।


4. NLP বা Neuro linguistic program  

আসলে NLP হলো এক ধরনের বিশেষ Neuro থেরাপি যার যা আমাদের মাইন্ড এর behavior প্যাটার্ন সম্পূর্ণ পরিবর্তণ করা সম্ভব, পুরোনো স্মৃতি সম্পুর্ন মুছে ফেলা বা সম্পুর্ন নতুন ধারনা মনের মধ্যে implant করা সম্ভব। প্রতিদিন বিশেষ টেকনিক ব্যবহার দ্বারা আমরা দুশ্চিন্তা মত সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে পারি। এছাড়াও নিজের আত্মবিশ্বাস কে সুষ্ঠ ভাবে গড়ে তুলতে সক্ষম এবং সহজে বিষন্নতা বা হতাশা কে চিরকালের মত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।   

তবে NLP টেকনিক কেবল মাত্র NLP Expert দের পরামর্শ নিয়ে করা উচিত, ভুল NLP টেকনিক নিজের জীবনে আরো বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে ।


5. Binaural Beats 

বাইনারাল বিটস এটি এক ধরনের বিশেষ মিউজিক ফ্রিকোয়েন্সি যা মানুষের মস্তিষ্ক কে আলফা বিটা কামা মতো বিভিন্ন  স্তরে  নিয়ে সহজে সক্ষম এই প্রত্যেকটি আমাদের মস্তিষ্কের প্রত্যেকটা স্তর যার দ্বারা আমরা সহজেই নিজেদের ইমোশান চিন্তা ভাবনা ও চেতনার উপর স্থিরতা প্রদানে সক্ষম এই music গুলি ডিপ্রেশন বা দুশ্চিন্তার মত সমস্যা সহজে কাটিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

এছাড়াও এই মিউজিক ফ্রিকোয়েন্সি সবচেয়ে বড় গুণ হল এটি  ঘুমের সমস্যা দূর করে ও রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনেও সাহায্য করে ।


6. Laughing therapy বা লাফিং থেরাপি:

লাফিং থেরাপি অর্থ হাসি, আসলো সমস্ত রোগের ঔষধ বলা হয় হাসি আপনি যত বেশি হাসবেন তত কম রোগ হওয়ার ভয় থাকবে আপনার।

কারণ কিছু বিশেষ পরীক্ষার দ্বারা প্রমানিত হাসি আমাদের ইউনিটি’ বুস্ট করে হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায় স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা কমায় এবং ভয় বা উদ্বেগ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। যে কোনো স্টেজের ডিপ্রেশন বা দুশ্চিন্তার ক্ষেত্রে হাসি বা লাফিং থেরাপি সবচেয়ে সহজ ও উপকারী ন্যাচারাল ট্রিটমেন্ট ও কম খরচ সাপেক্ষ।  



8. Gratitude বা পার্থনা:

মানুষের জীবন প্রতিটা মুহূর্ত খুবই অমূল্য তাই জীবনে কী কী নেই তার হিসাব বন্ধ রেখে আমাদের কাছে যা আছে তাই নিয়ে ভগবান বা পরম ঈশ্বর কে ধন্যবাদ জানানো উচিত।

যাতে জীবনের কাছে হেরে না গিয়ে যতটুকুই সমস্যা থাকুক না কেন তার সাথে লড়াই করার শক্তি পাওয়া যায়। তাই ভারতীয় সংস্কৃতিতে প্রতিটিই মানুষ কে প্রতিদিন Gratitude বা পার্থনা করার কথা বলা হয় যার দ্বারা মানুষ জীবনের প্রতি আশাবাদী থাকে যাতে নিজের বিষন্নতা ও দুশ্চিন্তা সমস্যা সাথে সহজে লড়াই করতে পারেন ।


আপনার যদি দুশ্চিন্তার থেকে মুক্তি পেতে মেডিটেশন শিখতে চান তবে আমাদের CALL করুন 9433-657349 নুম্বেরে বা Email করুন contact@wisdomcue.com এ,    

আসা করি আপনাদের সাহায্য করতে পেরেছি, এই তথ্য সংক্রান্ত আপনার কোন মতা মত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানতে ভুলবেন না ও ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *