পদ্মাসন সম্পর্কে এই তথ্যটা আপনার অজানা | What is Padmasana in Bengali

padmasana

পদ্মাসন (Padmasana):

এই শব্দটি একটি Sanskrit শব্দ যার বিবরণ পাওয়া যায় মহর্ষি পতঞ্জলির যোগ শাস্ত্রে, যার অর্থ হল অজ্ঞান বা অন্ধকার থেকে পরম জ্ঞান বা আলোর সন্ধানের যাত্রা ।

কারণ পদ্ম হল এমন এক বিশেষ রকমের ফুল যা পাকে জন্মায় কিন্তু ভগবানের পূজায় ব্যবহৃত হয়, যা বোঝায় আপনার সৃষ্টি কোথায় তা গুরুতপূর্ণ নয়, তোমার নিজেকে ব্যক্ত করাই আসলে গুরুতপূর্ণ ।

এছাড়া পদ্ম; জ্ঞান, পবিত্রতা, বিকাশ, অনাসক্তি, আধ্যাত্মিকতা ও সৌভাগ্যের প্রতীক।

এইজন্যই আসনের নাম পদ্মাসন, কারণ আপনি এই আসনে বসলে আপনাকে দেখতে বিকশিত পদ্মের মতো মনে হয় |

পতঞ্জলি যোগশাস্ত্র মতে পদ্মাসন প্রধানত ৭ টি ভাগ বিভক্ত, যথা-  মুক্ত পদ্মাসন, বদ্ধ-পদ্মাসন, উত্থিত পদ্মাসন ,অর্ধ বদ্ধ-পদ্মাসন   উর্ধ্ব-পদ্মাসন , গুপ্ত পদ্মাসন ও পদ্ম-মত্‍শাসন ।  


১। মুক্ত-পদ্মাসন পদ্ধতি (Mukta Padmasana):

সবার প্রথমে একটি Comfortable জায়গা ঠিক করুন, এই যোগটির প্র্যাক্টিস যদি আপনি কোনো মাঠ বা চারিদিক খোলা জায়গায় করেন তাহলে ভালো হবে |

সবার প্রথম শিরদাঁড়া সোজা করে বসুন ও গভীর ভাবে দশবার গভীর নিশ্বাস নিন। এবার বাঁ পা হাঁটুটা ভাঁজ করে ডান থাইয়ের উপর এবং ডান পা একইভাবে বাঁ থাই উপর রাখুন। যতটা সম্ভব ততটা অবধি দুটো পায়ের উপরিভাগকে স্ট্রেচ করুন, প্রথমে জোর করে কোন কিছু করার দরকার নেই।  

এবার হাত দুটো চিৎ করে অথবা ধ্যান করার ভঙ্গিতে দু’হাঁটুর উপর রাখুন অথবা নমস্কারের ভঙ্গিমায় বুকের মাঝখানে রাখুন ও আপনার মাথাকে উপরের দিকে তুলে রাখুন।  

সহজভাবে যতক্ষণ পারা যায় ঐ অবস্থায় থাকার চেষ্টা করুন | তারপর আস্তে আস্তে পা গুলো নামিয়ে নিন ও রিল্যাক্স করুন । অন্তত ৫ বার এটি রিপিট করুন একই ভাবে।

উপকারিতা : যোগীরা বলেছেন এই মুক্ত-পদ্মাসন সর্বরোগ নিরাময় আসন । যা হৃদয় ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং হাঁপানি রোগ থেকে শুরু করে cholesterol সহ সব কিছুকে দূর করে।

আপনি হয়তো জানেন মেরুদণ্ডের কর্মক্ষমতার উপরই আমাদের যৌবন ও স্বাস্থ্য নির্ভর করে, এই মুক্ত-পদ্মাসন মেরুদণ্ডের শক্তি বৃদ্ধিতে ও নমনীয়তা বাড়াতে সাহায্য করে এছাড়াও আমাদের চিন্তাশক্তি, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে, স্নায়ু সতেজ ও সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।


২। বদ্ধ-পদ্মাসন পদ্ধতি (Baddha Padmasana):  

সবার প্রথম শিরদাঁড়া সোজা করে বসুন এবং মুক্ত-পদ্মাসন পদ্ধতির মতো গভীর ভাবে দশবার গভীর নিশ্বাস নিন । এবার বাঁ পা হাঁটু থেকে ভেঙে ডান থাইয়ের উপর এবং ডান পা একইভাবে বাঁ থাই উপর রাখুন ।

এবার ডান হাত পেছনদিক দিয়ে ঘুরিয়ে এনে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল এবং একইভাবে বাঁ হাত পেছন দিয়ে ঘুরিয়ে এনে ডান পায়ের বুড়ো আঙুল ধরুন ও হোল্ড করুন

২০ সেকন্ড ।  তারপর আস্তে আস্তে পা গুলো নামিয়ে নিন ও রিল্যাক্স করুন । অন্তত তিন বার এটিকে রিপিট করুন একই ভাবে।

উপকারিতা: এই আসন আপনার স্পাইন alignment কে ঠিক করে ও বুকের পাঁজরের গঠনগত সমস্যাকে দূর করে । আপনার শরীরের কলেস্টেরলের লেভেলকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে ।আপনার ভয়, উদ্বেগ এবং ঘুমের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এই আসন।


৩। উত্থিত পদ্মাসন পদ্ধতি (Utthita Padmasana):

সবার প্রথমে পদ্মাসনে বসুন । এবার দুটি হাতকে সমান করে কোমরের দুটি পাশ দিয়ে মাটিতে রাখুন। ও গভীর ভাবে নিশ্বাস নিন এবার হাতের উপর জোর দিয়ে নিজের বাকি শরীরকে মাটি থাকে উপরে তুলুন ও হোল্ড করুন দশ থাকে কুঁড়ি সেকেন্ড ।   

এরপর আস্তে আস্তে শরীরকে মাটিতে নামিয়ে পদ্মাসনের অবস্থায় বসুন । ক্ষাণিকটা বিশ্রাম নিয়ে পা বদল করে আবার করুন ।  অন্তত ৫ বার এটি রিপিট করুন একই ভাবে ধীরে ধীরে নিজের সুবিধা মত ।

উপকারিতা : আপনার পেটের বাড়তি চর্বিকে কমিয়ে আপনার ক্ষিদে বাড়ায়, হাতের ও কাঁধের পেশী শক্ত করে এবং দেহে প্রচণ্ড শক্তি আনে ও নমনীয়তা বাড়ায় । শরীরের স্নায়ুগুলিকে সচল রাখে ও হৃদরোগ, রক্তচাপ কমায় । 


৪। উর্ধ্ব-পদ্মাসন (Urdhva-Padmasana):

সবার প্রথমে একটি পরিষ্কার যায়গা খুঁজে বার করুন ও সমান ভাবে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ুন । ও কোমর থেকে নিচের অংশকে ভাঁজ করে মুক্ত-পদ্মাসনের মত একটি পা অন্য পায়ের উপর রাখুন ।

এবার পিঠের উপর ভর দিয়ে হাত ও পাকে উপরের দিকে বা মাথার দিকে স্ট্রেচ করুন এবং এই পজিশনটিকে হোল্ড করুন 10 থাকে 20 সেকন্ড ।   

এরপর আস্তে আস্তে শরীরকে মাটিতে নামিয়ে বসুন । ক্ষাণিকটা বিশ্রাম নিয়ে পা বদল করে আবার করুন ।  অন্তত ৫ বার এটিকে রিপিট করুন এবং একই ভাবে ধীরে ধীরে নিজের সুবিধা মত সময় বাড়ান ।

https://youtu.be/Pup8xhAx7jE

উপকারিতা : আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও আপনার কোমরের ব্যথার সমসা থেকে আপনাকে চির মুক্তি দেয় । শরীরের কলেস্টেরলের লেভেলকে কনট্রোল করে এই আসন ও আপনার ঘুমের সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্তি দেয় ।


৫। অর্ধ বদ্ধ-পদ্মাসন (Ardha Baddha Padmasana):

এই আসন-পদ্ধতিতে প্রথমে একটি পা অন্য পায়ের উপর স্থাপন করে হাত পেছন দিক থেকে ঘুরিয়ে এনে পা এর উপরে রেখে অন্য পায়ের বুড়ো আঙুলকে হাত দিয়ে ধরতে হবে ও হোল্ড করতে হবে 10 থাকে 20 সেকন্ড ।   

ক্ষাণিকটা বিশ্রাম নিয়ে পা বদল করে আবার এই আসনটিকে করতে হবে অন্তত ৫ বার, এবং একই ভাবে ধীরে ধীরে নিজের সুবিধা মত ও সময় বাড়ান ।

উপকারিতা : এই আসন আপনার পা ও কাঁধের সমস্ত পেশীকে শক্ত করে । আপনার সমস্থ ধরনের পেটের সমস্যা দূর করে এবং বাতের ব্যাথা থেকে মুক্তি দেয় এই আসনটি|


৬। গুপ্ত পদ্মাসন (Gupta padmasana):

প্রথমে মুক্ত-পদ্মাসনের মতো করে বসুন তারপর হাতের সাহায্যে শরীরকে সামনের দিকে টানুন | তারপর যতটা সম্ভব আস্তে আস্তে আপনার চিবুককে মেঝেতে স্পর্শ করার চেষ্টা করুন ।

মেঝেতে পুরোপুরি সমান হয়ে এই আসনে কিছুক্ষন বসে থাকুন এবং পুরো শরীরটিকে রিল্যাক্স করার চেষ্টা করুন।

তারপর নিজের দুটি হাতকে পিছনে নিয়ে প্রণাম করার মত হাত জড়ো করুন ও আস্তে আস্তে শ্বাস নিন এবং এই অবস্থানটিকে কিছু সময়ের জন্য ধরে রাখুন অনন্ত ২০ সেকন্ড মতো | তারপরে আস্তে আস্তে প্রারম্ভিক অবস্থানে ফিরে আসুন।

ক্ষাণিকটা বিশ্রাম নিয়ে পা বদল করে আবার করুন অন্তত ৫ বার এই আসনটিকে, এবং একই ভাবে ধীরে ধীরে নিজের সুবিধা মত ও সময় বাড়ান।

উপকারিতা :   শরীর এর স্নায়ুগুলিকে সচল রাখে ও হৃদরোগ, রক্তচাপ কমায় এবং এতে মেরুদন্ডের alignment সম্পুর্ন সঠিক হয়ে যায় ।  


৭। পদ্ম-মত্‍শাসন (Padma Matsyasana) :

প্রথমে মুক্ত-পদ্মাসন বসুন তারপর আস্তে আস্তে পিছনে হাতের সাহায্যে ব্যালান্স রেখে শুয়ে পড়ুন । আস্তে আস্তে মাথার উপর ভার রেখে পিঠকে মাটি থেকে উপরে তুলুন যাতে ও আপনার শরীরকে ইংলিশের U শেপের মতো করুন স্ট্রেচ |

তারপর আস্তে আস্তে নিজের হাত দুটি কে বুকের উপরে রাখুন ও প্রণাম অবস্থায় জড় করুন ও হোল্ড করুন 10 থাকে 20 সেকন্ড অবধি । 

ক্ষাণিকটা বিশ্রাম নিয়ে আবার করুন অন্তত ৪ বার, এবং একইভাবে ধীরে ধীরে নিজের সুবিধা মত ও সময় বাড়ান ।

উপকারিতা : আপনার পেটের বাড়তি চর্বি কমিয়ে ক্ষিদে বাড়ায়, হাতের ও কাঁধের পেশী শক্ত করে এবং হাতের প্রচণ্ড শক্তি আনে ও নমনীয়তা বাড়ায় । শরীরের স্নায়ুগুলিকে সচল রাখে ও হৃদরোগ, রক্তচাপ কমায় । 


সতর্কতা

যাঁরা হার্টের অসুখ, রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি ইত্যাদি সমস্যার ভুগছেন, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যোগব্যায়াম অভ্যাস করবেন না । যোগ বা yoga প্র্যাক্টিসের সময় কোনও অভিজ্ঞ শিক্ষকের পরামর্শ নিন ।

সব সময় মনে রাখবেন যোগ অনুশীলন খালি পেটে করা উচিত কিন্তু ভরা পেটে যোগ অনুশীলন করা কখনোই উচিত না ।


আশা করি মেডিটেশন নিয়ে আপনার সমস্ত doubt আমরা clear করতে পেরেছি | লেখাটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই এটিকে সবার সাথে শেয়ার করুন এবং অবশ্যই কমেন্টে লিখে জানান আপনার মতামত |


এছাড়া আপনি যদি সত্যিই মেডিটেশন অনলাইন কিংবা আমাদের সেন্টারে এসে অফলাইনে শিখতে চান তাহলে এখুনি কল করুন +91 9433-657-349 এই নাম্বারে |

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *