যোগ আসন কী (What is Yoga) :
সংস্কৃত শব্দ “যোগ” কেই ইংরেজী ভাষাতে YOGA বলে । আসলে যোগ মানে কিন্তু ব্যায়াম নয় এটি শরীর, মন, ও আত্মার ক্রম উন্নয়নের পদ্ধতি যার দ্বারা সমাধী স্তরে পৌঁছান সম্ভব ।
সঠিক ভবে যোগ প্রণালী বুঝতে হলে নিজের সংকীর্ন মনের গন্ডি ছেড়ে সৃষ্টির মূলের দিকে তাকাতে হবেই। কারণ যোগ মানে আদির সঙ্গে প্রান্তের যোগ, অসীমের সঙ্গে সসীমের যোগ এবং জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার যোগ ।
এবং কেমন করে পরম তন্ময়তা লাভ করা যায়, যাতে মনের আয়নায় স্পষ্টভাবে জেগে থাকবে নিজের আসল স্বরূপের ছবি, এবং এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়াই যোগের আসল প্রয়াস।
“যোগসূত্র” গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ের দ্বিতীয় সূত্রে মহর্ষি পতঞ্জলি যোগের বর্ননা দিয়েছেন – ‘চিত্তবৃত্তি নিরোধ’। চিত্ত অর্থাত্ মন যা যোগ প্রণালীতে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত ।
‘চিত্তবৃত্তি নিরোধ’ অর্থ যোগ দ্বারা কাম, ক্রোধ, মোহ, অনুরাগ, স্নেহ এই পাঁচটি চিত্তবৃত্তি পরিহার। যা সম্পুর্ন করতে পারলে মানুষের মুক্তি লাভ ও নিজের জীবন কে নিজের নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব।
যোগের শারিরীক ও মানসিক সংযুক্তি :
জানলে অবাক লাগবে আমাদের শরীর, কোনও না কোনও ভাবে এই অসীম মহাবিশ্বের এর সাথে কানেকটেড ও আমাদের শরীরের মধ্যে লুকিয়ে আছে আমাদের সব সমসার সমাধানের পথ ।
আমাদের শরীর দেখতে সাধারন কিন্তু এটি খুবই জটিল | আপনি হয়তো জানেনই না এটি আসলে অনেক গুলি লেয়ার দিয়ে তৈরি | প্রতিটা স্তর এক এক প্রকার ভাবে মুক্তি ও জ্ঞানের দ্বার, শুধু আমাদের এই প্রণালীকে গভীরভাবে অনুভব করা ও প্রতি স্তরের সাথে সমতায় আসা প্রয়োজন ।
১। মনময় কোষ:
মনময় কোষের কাজ হলো মনকে উন্মুক্ত ও নিজের ভাবনাকে স্থিরতা প্রদান করা। কারণ আপনি যা ভাবছেন তার প্রভাব কোনও না কোন ভাবে আপনার শরীর ও আপনার জীবন এ প্রভাব ফেলে।
তাছাড়া ডাক্তাররাও মনে করেন আপনার সমস্থ শারিরীক সমসার 90 ভাগ আপনার মনের সাথে যুক্ত | আপনার চঞ্চল এবং সন্দেহবাতিক মনই হলো আপনার বেশিরভাগ রোগের মূল কারণ |
তাইতো মনের স্থিরতা থাকার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি, আর সেই কাজকেই সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে মনময় কোষ | আর এই কোষের সর্বোচ্চ উপকারিতা তখনই পাওয়া সম্ভব যখন আপনি যেকোনো যোগ সাধনায় নিজেকে দীর্ঘদিন ধরে সময় দেবেন |
২। প্রাণময় কোষ:
প্রাণময় কোষ আপনার শরীরের একপ্রকারে এনার্জি সিষ্টেম । যদি আপনার এই এনার্জি সিষ্টেম আপনার শরীরের alignment-এর সাথে সঠিক অবস্থায় থাকে তবে কোনোদিন আপনার শারিরীক সমস্যা হবে না ।
আমাদের শরীরে তখনই সমস্যা তৈরী হয় যখন এই alignment কোনো ভাবে নষ্ট হয় । তাই এই alignment-কে সঠিক রাখতে প্রাণময় কোষের নিয়ন্ত্রণ সাধনে প্রাণায়াম বিশেষ ভূমিকা পালন করে |
৩। বিজ্ঞানময় কোষ:
বিজ্ঞানময় কোষের উন্নতি সাধনে আপনি পেতে পারেন অভূতপূর্ব জ্ঞান । আপনার শরীর নিজের ভিতরেই অসীম জ্ঞানকে ধরে রেখেছে | যা আপনার জেনে অবিশ্বাস্য লাগতেই পারে | কিন্তু এটা সত্যি |
আমরা আজ প্রত্যেকেই বাইরের সব জ্ঞান এতটাই খুঁজতে ব্যস্ত যে নিজের অন্তরের এই জ্ঞান হাতের কাছে থেকেও সেটাকে আমরা অনুভব করতে পারছি না | যেটা খুবই প্রয়োজন অনুভব করার ।
মন যখন বিস্তারিত হয়ে একটি বিশেষ স্তরে পৌঁছায় তখন তাঁর মধ্যে ‘বোধি জ্ঞান’ জাগ্রত হয়। ধারণার দ্বারা বিজ্ঞানময় কোষ পুষ্ট হয়।
৪। আনন্দময় কোষ:
আনন্দময় কোষ হচ্ছে যোগের সবচেয়ে উচ্চতম অবস্থা যেখানে আছে শুধু পরমানন্দের অনুভুতি । এই কোষে বৈয়ষ্টিক চেতনা বা ছোট আমি বোধ থাকে বটে তবে তা অস্পষ্ট ও আবছা ভাবে। এই অবস্থায় বড় আমি বোধ অর্থাৎ আমিই ঈশ্বর এই ভাব জেগে ওঠে।
এই স্তরে মন সেই অনন্ত সত্তাকে পেতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এই সূক্ষ্ম কারণ মন হ’ল পূর্ণত্বের দ্বার পথ। এখানে সামান্য একটা অতি সূক্ষ্ম আবরণ থেকে যায় মাত্র যা অতিক্রম করলেই আত্মার সেই আত্যুজ্জ্বল আলোকের দর্শন লাভ হয়।
আমরা যা চাই সবই শরীর এর পক্ষে সম্ভব যেমন সুস্থ শরীর, সুস্থ মন, আনন্দ , শান্তি ও চিন্তা মুক্ত জীবন কিন্তু আমাদের শরীর সাধারণত সেই সমতায়ে নেই তাই যোগ বা yoga এমন এক প্রক্রিয়া যা আমাদের সেই সমতা প্রদান করে এই গুলো achieve করতে সাহায্য করে ।
আরো পড়ুন: যোগব্যায়াম করার টিপস
যোগের প্রকার (Types of Yoga) :
যোগ প্রধানত চার ভাগে বিভক্ত | যেমন- কর্ম যোগ, জ্ঞান যোগ, ভক্তি যোগ এবং রাজ যোগ |
১। কর্ম যোগ:
কর্ম যোগে বলা হয়, ভালো কর্মই মনকে পরিশুদ্ধ করে এবং আমাদের সর্বদা ব্যক্তিগত ফলাফলের প্রতি আসক্ত না হয়ে ধর্ম অনুযায়ী কাজ করা উচিত । কর্মের মধ্যেই ধর্ম এবং ধর্মের মধ্যেই কর্ম লুকিয়ে রয়েছে | যে যোগী নিষ্কাম মনোভাব নিয়ে করে অর্থাৎ ফলের চিন্তা ছাড়া কাজই যার একমাত্র উদ্দেশ্য হয় সেই একমাত্র আত্মজ্ঞান কিংবা পরমাত্মাকে লাভ করতে পারে |
২। জ্ঞান যোগ:
জ্ঞানযোগ হল নাম ও রূপের বাইরে গিয়ে পরম সত্যকে উপলব্ধির পথ । এই অনুসারে, সঠিক জ্ঞানের মাধ্যমেও মোক্ষ লাভ কিংবা আত্মজ্ঞান সম্ভব।
যে যোগী, সঠিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে এগিয়ে যাবে, সে দ্রুতই নিজের আসল স্বরূপকে উপলব্ধি করতে পারবে এবং অবশেষে এর মাধ্যমে সে আত্মজ্ঞান কিংবা পরমাত্মাকেও লাভ করতে পারবে |
৩। ভক্তি যোগ:
ভক্তিযোগ হচ্ছে ভগবানকে লাভ করার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা। শ্রীমদ্ভাগবত গীতায় ভক্তির নয়টি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে । যেমন – শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ, বন্দন,অর্চন, পাদসেবন, দাস্য,সখ্য ও আত্মনিবেদন ।
যে যোগী নিজেকে শুধু ভগবান কিংবা পরমাত্মার কাছে নিজেকে পুরোপুরি অর্পণ করে দেবেন ভক্তির মাধ্যমে, সেও শেষে আত্মজ্ঞান কিংবা পরমাত্মাকেও লাভ করতে পারবে|
৪। রাজ যোগ :
রাজযোগের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে রাজার মতো নিজের অন্তরকে আত্মবিশ্বাসী, ভয়হীন এবং আত্মনিয়ন্ত্রিত বানানো | এই যোগকে অষ্টাঙ্গ যোগও বলা হয়ে থাকে |
যেটা এই ৮টি অংশ দ্বারা গঠিত- যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি | যে যোগী এই অষ্টাঙ্গ যোগ সাধন করতে পারবে সেও আত্মজ্ঞান কিংবা পরমাত্মাকেও লাভ করতে পারবে অনায়াসে |
এছাড়া আপনি যদি সত্যিই মেডিটেশন অনলাইন কিংবা আমাদের সেন্টারে এসে অফলাইনে শিখতে চান তাহলে এখুনি কল করুন +91 9433-657-349 এই নাম্বারে |